হযরত খাদিজা রাঃ জীবনী icon

হযরত খাদিজা রাঃ জীবনী

1.0

হযরত খাদিজা (রা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

App Information

Version
Update
May 07, 2024
Developer
Installs
1+
App Description
উম্মুল মোমেনীন হযরত খাদীজা (রাঃ) ৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে মরুময় আরব দেশের মক্কা নগরে সুবিখ্যাত কুরাইশ বংশে জনন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল খুওয়াইলিদ ও মাতার নাম ফাতেমা। মাতা ফাতেমাও ছিলেন সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশীয় রমণী।

আরব দেশে তখন প্রধান দুটি গোত্র বিখ্যাত ছিল। তার মধ্যে একটির নাম আদনান ও অপরটির নাম কাহতান। আদনান ছিল একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তির নাম, তারই নামানুসারে তার বংশাবলিকে বলা হত আদনান বংশ। এ আদনান বংশের দশম পুরুষের নাম ছিল ফিহির ইবনে-মালিক। তিনি সর্বসাধারণের নিকট কুরাইশ নামে পরিচিত। যদিও কুরাইশ বংশ বহু গোত্রে বিভক্ত ছিল, তথাপি বাইরে তাঁরা একমাত্র কুরাইশ নামেই পরিচিত ছিলেন।

কুরাইশ বংশের ষষ্ঠ পুরুষের নাম ছিল কুসাই ইবনে-কিলাব। তিনি কুরাইশ বংশীয়দের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। কুসাই ইবনে-কিলাবের তিন পুত্র ছিল। যথা- আবদুল মান্নাফ, আবদুদ্দার ও আবুল ওজ্জা।

হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ব পুরুষ এবং হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর পূর্ব পুরুষ কুসাই-ইবনে কিলাব পর্যন্ত একই ছিল। কুসাই-ইবনে কিলাবের এক পুত্র আবদুল মান্নাফ হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ব পুরুষ এবং অপর পুত্র আবুল ওজ্জা হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর পূর্ব পুরুষ।

কুসাই-ইবনে কালিবের পুত্র ওজ্জা, ওজ্জার পুত্র আসাদ, আসাদের পুত্র খুওয়াইলিদের কন্যা খাদীজা।

অপরপক্ষে কুসাই-ইবনে কিলাবের পুত্র আবদুল মান্নাফ, মান্নাফের পুত্র হাশেম, হাশেমের পুত্র আবদুল মোত্তালিব, আবদুল মোত্তালিবের পুত্র আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহর পুত্র হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর মাতার নাম ফাতেমা। ফাতেমার পিতার নাম জায়েদ। তিনি হযরত রাসূলে আকরামের ঊর্ধ্বতন দশম পুরুষ গালিবের বংশধর। কাজেই পিতা ও মাতা উভয়ের দিক দিয়েই খাদীজা (রাঃ) ছিলেন কুরাইশ বংশীয়া। আর তৎকালে কুরাইশ বংশীয়গণই ছিলেন আরবের সর্বাপেক্ষা সম্ভ্রান্ত, সকল গোত্রের কর্তৃত্ব এরাই করতেন।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিতা-মাতার পূর্ব পুরুষগণ কয়েক পুরুষ পর্যন্ত ঊর্ধ্বে গিয়েই হযরত খাদীজার পিতা ও মাতার উভয়ের বংশের সাথে মিলিত হয়েছে। সুতরাং হযরত খাদীজা (রাঃ) যে বংশ মর্যাদায় সর্বদিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ ছিলেন সেকথা বলাই বাহুল্য। কুরাইশ বংশ ছাড়াও আরব দেশে তৎকালে আরও অনেক বংশ ছিল। কিন্তু শিক্ষা-দীক্ষায়, ধন-সম্পদে ও মান-সম্মানে কুরাইশদের সামনে অন্য কোন বংশেরই মাথা তুলে দাঁড়াবার ক্ষমতা ছিল না।

কুরাইশদের মধ্যেও আবার অনেকগুলো গোত্র ছিল এবং সকল গোত্রের লোকের মর্যাদা সমান ছিল 'না। কুরাইশদের মধ্যে হাশেমি বংশই ছিল মান-মর্যাদা ও প্রভাব প্রতিপত্তিতে সকলের নেতৃস্থানীয়। এ হাশেমি বংশেই আমাদের নূরনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের ১৫ বছর পূর্বে এবং ইসলাম প্রচারিত হওয়ার ৫৫ বছর পূর্বে হযরত খাদীজা (রাঃ) জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালে আরবে নারীদের শিক্ষার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হত না, তথাপি হযরত খাদীজার পিতা-মাতা অত্যন্ত যত্নের সাথে তাঁদের একমাত্র কন্যা খাদীজাকে শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে এমন আদর্শ নারীরূপে গড়ে তুলেছিলেন যে, তখনকার অন্ধকার যুগে কেন, বর্তমান সভ্যতার যুগেও সেরূপ আদর্শ শিক্ষা কোন নারী পায় বলে মনে হয় না।

হযরত খাদীজা (রাঃ) ছিলেন অতুলনীয় সুন্দরী ও গুণবতী; অবশ্য রূপের প্রশংসা সকল দেশে সকল জাতির নিকটে এক রকম নয়। রূপের প্রশংসা বিভিন্ন জাতির নিকটে বিভিন্ন প্রকার। কেবল শরীরের রং ফরসা বা লাল হলেই তাকে সুন্দরী বা রূপবতী বলা চলে না। আফ্রিকার অধিবাসী সবাই ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। কিন্তু তাই বলে যে তাদের মধ্যে রূপবতী বা গুণবতী নারী নেই এরূপ ধারণা করা ভুল। তাদের ভিতরেও রূপের প্রতিযোগিতা চলে। নারীর সৌন্দর্যের মূল কথা তার দেহের গঠন ও কমনীয়তা। হযরত খাদীজা (রাঃ) কে সেদিক দিয়ে একেবারে নিখুঁত সুন্দরী বলা চলে। আরব দেশের মানুষ এমনিতেই শ্বেতাঙ্গ, কাজেই তাদের নিকট মেয়েদের সৌন্দর্যের প্রশংসা হল দেহের লাবণ্য, কমনীয়তা ও গঠন প্রকৃতির নৈপুণ্য। এদিক দিয়ে হযরত খাদীজা (রাঃ) ছিলেন অতুলনীয়া।

তিনি যেমন ছিলেন অসাধারণ সুন্দরী, তেমনি ছিলেন বিশেষ গুণসম্পন্ন। শৈশবকাল থেকেই তাঁর স্বভাব চরিত্র ছিল অত্যন্ত নিখুঁত ও সরল-সুন্দর। তাঁর অনুপম সৌন্দর্য ও ব্যবহারের মাধুর্যতায় সকলেই তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করত। যৌবনকালে তিনি অশেষ গুণবতী, সত্যপিপাসু ও নির্মল চরিত্রের অধিকারিণী ছিলেন। তাঁর স্বচ্ছ চরিত্রের জন্য সকলে তাঁকে 'তাহেরা' (পবিত্র) উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।
Read more